মেয়েটির খুব মন খারাপ হয়। প্রাণপণ চেষ্টায় চোখের পানি গাল বেয়ে পড়া ঠেকায় সে। এতো কষ্ট করে বানিয়ে এনেছে। এমনিতে সে বানাতে পারতো না। ছেলেটি পছন্দ করে বলে বান্ধবীদের কাছ থেকে শিখেছে। নিজে পলাশীর মোড়ে গিয়ে পেঁয়াজ, মরিচ, ডিম কিনেছে। ছেলেটিকে জানায়নি। একবারে নুডুলস তৈরী করে এনে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে ওকে।
কিন্তু আনার পর কি হলো? ছেলেটি রিডিংরুমে পড়তে আসা ব্যাচের আরো দুই বন্ধুকে ডেকে এনে খাইয়ে দিলো পুরোটা। দেয়ার সময় আবার আদিখ্যেতা, 'নে খা খা, ও নিজ হাতে বানিয়েছে, খেয়ে বল কেমন স্বাদ।' ওরাও খেয়ে খুব মজা হয়েছে বলে প্রশংসা করে। কিন্তু তাতে কি! মেয়েটি তো আর ওদের জন্য আনেনি নুডুলস। সে এনেছে ছেলেটির জন্য। ছেলেটি তো একটু নুডুলস মুখেও দিলো না।
'কেন?' দুই বন্ধুর সামনে হাসিমুখে নুডুলসের 'অপচয়' সয়ে গেলেও ওরা চলে যাবার পর অভিমান-ভরা চোখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো সে।
'কি কেন?' ছেলেটি যেন প্রশ্নের মর্ম বুঝতে পারে না।
'আমি ওদের জন্য এতো কষ্ট করে এটা বানাইছি? তুই খেলি না কেন?'
'বাহ। ওরা তো খেয়ে তোমার প্রশংসাই করলো। তোমার তো ভালোই লাগার কথা।'
'কিন্তু তুই তো এক চামচও মুখে দিলি না।'
এবার একটু মুচকি হাসি দেখা যায় ছেলেটির মুখে - 'দেখ্ এখন কেমন লাগে। যার জন্য এনেছিস, সে না খেলে কতটা কষ্ট লাগে বোঝ। তুই-ও আমাকে একদিন এভাবে কষ্ট দিয়েছিস'।
'আমি ? কবে?'- মেয়েটি মনে করতে পারে না।
ছেলেটি-ই মনে করিয়ে দেয়। মাসদুয়েক আগে কলেজের এক অনুষ্ঠানে নিজের লাঞ্চের প্যাকেটটা না খেয়ে রেখে সে দিয়েছিল মেয়েটির জন্য। মেয়েটি ঐ অনুষ্ঠানে আসেনি। অনুষ্ঠান শেষে মেয়েটিকে ডেকে প্যাকেটটি দেয়। বলেনি যে, সে না খেয়ে ওটা তার জন্য রেখেছে। মেয়েটি 'থ্যাংক ইউ' বলে সেটা নেয়। কিন্তু পরক্ষণেই 'আমি দুপুরের খাবার খেয়েছি' - বলে ছেলেটির সামনেই সে এক বান্ধবীকে প্যাকেটটা দিয়ে দেয়।
হ্যাঁ- মনে পড়ে মেয়েটির। সেদিন সে দুপুরের খাবার খেয়েছিল আগেই, আর প্যাকেটের গুরুপাক খাবারটাও তার খেতে ইচ্ছে করছিল না। তা-ই সে প্যাকেটটা বান্ধবীকে দিয়ে দেয়। আর এই ছোট্ট একটা ঘটনা যে ছেলেটিকে কোনভাবে কষ্ট দিতে পারে - তা তার মাথায়ই আসে নি। কারণ, তখন তারা ছিল কেবলই বন্ধু- অন্তত মেয়েটির কাছে। সম্পর্কটা অন্যদিকে মোড় নেয় আরও পরে। তখন সে কিভাবে বুঝবে যে, ছেলেটি এজন্য কষ্ট পেতে পারে।
মেয়েটির ব্যাখ্যা চুপচাপ শোনে ছেলেটি। তারপর বলে, 'সে যাই হোক, এখন কাটাকাটি। একবার তুই আমার আনা খাবার আরেকজনকে দিয়েছিস, এবার আমি দিলাম। কিন্তু এর পর আর এমন হওয়া চলবে না। আয় চুক্তি কর।'
'চুক্তি?' - মেয়েটি অবাক হয়।
ছেলেটি একটা কাগজের টুকরো বের করে। তাতে লেখে- '....... ও ........, আমরা দুই জন প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, ভবিষ্যতে একজনের আনা খাবার অপরজন খাইতে বাধ্য থাকিবে- অন্য কাহাকেও দিতে পারিবে না। একান্তই না পারিলে খাবার ফেলিয়া দেয়া হইবে, তথাপি অন্য কাহারো সাথে ভাগ করা যাইবে না।' - লেখে নিচে ছেলেটি স্বাক্ষর করে। মেয়েটিকেও স্বাক্ষর করতে বলে।
মেয়েটি স্বাক্ষর করার সময় মুচকি হেসে প্রশ্ন করে - 'আর চুক্তি ভঙ্গ করলে শাস্তি কি?'
ছেলেটি তার জবাব দেয় না - ' কাল দুপুরে আমি নুডুলস বানানোর জিনিসপত্র কিনে দেব তোকে, তুই বানিয়ে আনবি। '
'বয়েই গেছে আমার' - ভেংচি কাটে মেয়েটি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১০:৫২